রাজ্য আইনসভা

  • ভারতীয় সংবিধানের ১৬৮-২১২ ধারায় রাজ্য আইনসভা সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।
  • রাজ্য আইনসভা দুই কক্ষ বিশিষ্ট হয়, যথা— উচ্চকক্ষকে বিধানপরিষদ(Legislative Council) ও নিম্নকক্ষকে বিধানসভা(Legislative Assembly) বলে । এই দুটিকে একত্রে 'বিধানমন্ডলী' বলে ।
  • বর্তমানে ৬টি রাজ্যে(উত্তরপ্রদেশ, বিহার, অন্ধ্রপ্রদেশ, কর্ণাটক, তেলেঙ্গানা, মহারাষ্ট্র) দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট আইনসভা ও বাকি রাজ্য গুলিতে এক কক্ষ বিশিষ্ট আইনসভা রয়েছে।
  • অন্ধ্র প্রদেশ বিধানসভা ২২ জানুয়ারী ২০২০-এ বিধান পরিষদ বিলুপ্তির জন্য প্রস্তাবটি উত্থাপিত এবং পাস করে। কিন্তু বিধান পরিষদটি বিলুপ্ত করার প্রস্তাবটি এখনও ভারতের সংসদ কর্তৃক অনুমোদিত হয়নি।
  • রাজ্য আইনসভা বিধানসভা, বিধান পরিষদ(যে সকল রাজ্যে বর্তমান তাদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য) এবং রাজ্যপাল নিয়ে গঠিত।

বিধানসভা

  • রাজ্যে বিধানসভাই হল সর্বশক্তিমান । বিধানসভা অঙ্গরাজ্যের প্রধান আইন প্রণয়নকারী প্রতিষ্ঠান ।
  • বিধানসভার সদস্যগণ প্রাপ্তবয়স্ক ভোটাধিকারের ভিত্তিতে জনগণের দ্বারা প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত হন ।
  • সংবিধানের ১৭০(১) ধারা অনুসারে বিধানসভার সদস্য সংখ্যা সর্বাধিক ৫০০ও সর্বনিম্ন ৬০ হতে পারে । সিকিম, গোয়া, নাগাল্যান্ড, মিজোরাম, অরুনাচলপ্রদেশে সদস্য সংখ্যা ৬০-এর কম হতে পারে।
  • পশ্চিমবঙ্গের এক কক্ষবিশিষ্ট রাজ্য আইনসভা । বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার সদস্য সংখ্যা ২৯৪ + ১ = ২৯৫ । এর মধ্যে ২৯৪টি আসনের বিধায়করা এক-আসনবিশিষ্ট বিধানসভা কেন্দ্র থেকে সরাসরি নির্বাচিত হয়ে আসেন এবং এক জন সদস্য অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান সম্প্রদায় থেকে রাজ্যপাল কর্তৃক সরাসরি মনোনীত হন ।
  • বিধান পরিষদের গঠনঃ

    • বিধানপরিষদের সদস্যরা পরোক্ষ ভোটের মাধ্যমে একটি বিশেষ পদ্ধতিতে নির্বাচিত হয়ে আসেন ।
    • বিধান পরিষদের সর্বাধিক সদস্য সংখ্যা বিধানসভার মোট সদস্য সংখ্যার এক তৃতীয়াংশ(১/৩) হতে পারে এবং সর্বনিম্ন সদস্য সংখ্যা হতে পারে ৪০।
    • এক তৃতীয়াংশ(১/৩) সদস্য নির্বাচিত হন, স্থানীয় সংস্থা যেমন- পুরসভা, জেলা বোর্ড, গ্রাম পঞ্চায়েত ইত্যাদির সদস্য দ্বারা।
    • এক তৃতীয়াংশ(১/৩) সদস্য নির্বাচিত হন, বিধানসভার সদস্য দ্বারা। বিধানসভার সদস্য নয় এমন ব্যক্তিদের মধ্য থেকে নির্বাচন করতে হয়।
    • এক ষষ্ঠাংশ(১/৬) সদস্য রাজ্যপাল দ্বারা মনোনীত হন, সাহিত্য, বিজ্ঞান, কলা, সমাজ সেবা ইত্যাদি বিভাগে অভিজ্ঞ ব্যক্তি।
    • এক দ্বাদশ (১/১২) সদস্য নির্বাচিত হন, যারা রাজ্যের কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, এবং মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের চেয়ে কম নয় এমন কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অন্তত ৩ বছর শিক্ষকতা করেছেন তাদের দ্বারা।
    • এক দ্বাদশ (১/১২) সদস্য নির্বাচিত হন, যারা স্নাতক হয়েছেন এবং ঐ রাজ্যে থাকেন।

    কার্যকালঃ

    • বিধানসভা একটি অস্থায়ী কক্ষ। এর মেয়াদ পাঁচ বছর । তবে তার আগের বিধানসভা ভেঙে দেওয়া যায় । জাতীয় জরুরি অবস্থা চলাকালীন সংসদের অনুমোদনক্রমে বিধানসভার কার্যকালের মেয়াদ পাঁচ বছর থেকে বাড়িয়ে ছয় বছর করা যেতে পারে।
    • বিধান পরিষদ একটি স্থায়ী কক্ষ। প্রতি ২ বছর অন্তর এক তৃতীয়াংশ সদস্য অবসর গ্রহণ করেন এবং সমসংখ্যক সদস্য নির্বাচিত হন। একজন সদস্যের কার্যকাল ৬ বছর। অবসর প্রাপ্ত সদস্যরা পুনর্নির্বাচিত হতে পারেন।

    যোগ্যতা

    • ভারতের নাগরিক হতে হবে।
    • বিধান পরিষদের সদস্য হওয়ার জন্য ন্যুনতম ৩০ বছর বয়স হতে হবে এবং বিধানসভার সদস্য হওয়ার জন্য ন্যুনতম ২৫ বছর বয়স হতে হবে।
    • ১৯৫১ সালের জন প্রতিনিধিত্ব আইনে বর্ণিত অন্যান্য যোগ্যতার অধিকারী হতে হবে।

    শপথঃ

    • রাজ্যপাল বা রাজ্যপাল কর্তৃক নিযুক্ত কোন ব্যক্তির কাছে মন্ত্রীসভার সদস্যরা শপথ বাক্য পাঠ করেন।

    বিধানসভার অধ্যক্ষঃ

    • বিধানসভার সদস্যরা নিজেদের মধ্য থেকে একজনকে অধ্যক্ষ(Speaker) হিসেবে নির্বাচিত করেন।
    • তিনি বিধানসভার কার্যকাল পর্যন্ত পদে আসীন থাকেন। মেয়াদ শেষ হওয়ার পূর্বে পদটি খালি হতে পারে যদি-
      • তিনি বিধানসভার সদস্যপদ ত্যাগ করেন।
      • তিনি উপ-অধ্যক্ষের কাছে পদত্যাগ পত্র জমা দেন।
      • যদি বিধানসভার অধিকাংশ সদস্য তাঁর পদচ্যুতির জন্য একটি প্রস্তাব পাশ করেন। এই প্রস্তাবের ১৪ দিন পূর্বে বিজ্ঞপ্তি জারি করতে হয়।

    বিধানসভার অধ্যক্ষের কার্যাবলীঃ

    • লোকসভায় ভোট প্রদান করার ক্ষমতা নেই। তবে ডেডলক পরিস্থিতিতে নির্ণায়ক ভোট (Casting Vote)দেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে।
    • কোন বিল অর্থ বিল কিন সে বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের অধিকার আছে বিধানসভার স্পিকারের।
    • দলত্যাগ বিরোধী আইনের দৃষ্টিকোণ থেকে বিধানসভার কোনও সদস্যের সদস্যপদ থাকবে না বাতিল হবে সে বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের অধিকার আছে বিধানসভার স্পিকারের।
    • বিসনেস অ্যাডভাইসরি কমিটি, রুলস কমিটি এবং জেনারেল পারপাস কমিটির চেয়ারম্যানের পদ অলঙ্কৃত করেন স্পিকার।
    • বিভিন্ন সংসদীয় কমিটির চেয়ারম্যান নিয়োগ করেন।

    বিধান পরিষদের চেয়ারম্যানঃ

    • বিধান পরিষদের সদস্যরা নিজেদের মধ্য থেকে একজনকে চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত করেন।
    • বিধান পরিষদের চেয়ারম্যানের পদটি খালি হতে পারে যদি-
      • তিনি বিধান পরিষদের সদস্যপদ ত্যাগ করেন।
      • তিনি ডেপুটি চেয়ারম্যানের কাছে পদত্যাগ পত্র জমা দেন।
      • যদি বিধান পরিষদের অধিকাংশ সদস্য তাঁর পদচ্যুতির জন্য একটি প্রস্তাব পাশ করেন। এই প্রস্তাবের ১৪ দিন পূর্বে বিজ্ঞপ্তি জারি করতে হয়।